আরশিনগর সাদাত হোসাইন পিডিএফ ডাউনলোড । Arshinagar by Sadat Hossain PDF Download

 


বইয়ের নামঃ আরশিনগর
লেখকের নামঃ সাদাত হোসাইন
ক্যাটাগরিঃ সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনীঃ ভাষাচিত্র
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৫ সাল
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৭২
ভাষাঃ বাংলা

বইটির কিছু অংশঃ  ইমাম আকরাম হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন ইলেক্ট্রিসিটির পিলারটার নিচে। আরশিই তাকে প্রথম দেখল। তার আর তখন অত কিছু ভাবার অবস্থা নেই। সে তখন ঘোরগ্রস্ত এক মানুষ। তীব্র আতঙ্কে দিশেহারা। সে ইমাম সাহেবের দিকে অর্ধেকটা পথ দৌড়ে এসে হঠাৎ লুটিয়ে পরল কাদায়। ইমাম সাহেব যখন তাকে তুললেন, তখন আরশির শরীর থরথর করে কাঁপছে। আর সে বিড়বড়ি করে একটা মাত্র কথাই বলছে, আমি কিছু দেখি নাই। আমি কিছু দেখি নাই। আমি কিছু দেখি নাই ইমাম আকরাম হোসেন বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি যা বোঝার বুঝে নিলেন। আরশিকে কাঁধে করে নিয়ে তিনি নেমে এলেন যযাতিপুর বাজার পেরিয়ে নদীর ঘাটে। সেখানে সারি সারি নৌকা বাঁধা। তিনি দেখে শুনে একখানা ছইঅলা নৌকায় উঠে পড়লেন। বিপত্তি বাঁধাল তালা। গাছের সাথে লোহার শেকল দিয়ে তালা মেরে বেঁধে রাখা হয়েছে নৌকাগুলো। অবশ্য তালা ভাঙতে খুব একটা বেগ পেতে হল না তার। আরশিকে ছইয়ের ভেতর শুইয়ে রেখে নৌকা ছাড়লেন ইমাম সাহেব। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি? আরশি বা তার, কারও জন্য আর যযাতিপুরে থাকা সম্ভব না। কোনভাবেই সম্ভব না। যযাতিপুর মানেই এখন তাদের জন্য অবধারিত মৃত্যু। সুতরাং যতটা দূরে সরা যায়। ইমাম সাহেব হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নৌকা বেয়ে নদীর আড়াআড়ি চলে যাবেন। গন্তব্য রাঙারোড। রাঙারোড থেকে কোন একটা ব্যবস্থা করে নিবেন। আরশি রাঙারোড যেতে পারে, লোকমান এটা ধরণাও করতে পারবে না। ইমাম সাহেব রাঙারোড থেকে সোজা চলে যাবেন পিরোজপুর। তার গ্রামের বাড়ি। তারপর বাকিটা ভাবা যাবে। ইমাম আকরাম হোসেন আল্লাহর নাম নিয়ে বৈঠা ডুবালেন পানিতে। তখন শো শো করে বয়ে যাচ্ছে ঝড়ো বাতাস। উত্তাল হয়ে উঠছে নদী। তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চরাচর। নিকষ অন্ধকারে ঢেকে আছে রাতের পৃথিবী। সেই ভয়াবহ দূর্যোগের রাতে ওই অসীম মহাশুন্যের ওপারে বসে কেউ একজন হয়তো লিখে চলেছেন অন্য এক গল্প।

রিভিউঃ  আরশিনগর যাযাতিপুর নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের পটভূমিতে লেখা বেশ বড় পরিসরের একটি উপন্যাস।অবশ্য কাহিনীর পরিক্রমায় উপন্যাসের গল্পে যাযাতিপুর এবং এর আশেপাশের অঞ্চল ছাড়িয়ে একটা সময় শহুরে হাওয়াও এসে যুক্ত হয়।
যাযাতিপুরে মজিবর মিয়া আর নিলুফা বেগমের ঘরে জন্ম নেয়া অদ্ভুত মায়াবী চোখের মেয়ে আরশির জন্ম,তার বেড়ে উঠা আর বেড়ে উঠার সংগ্রাম নিয়ে এগুতে থাকে উপন্যাসের কাহিনী।
আরশিকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা নিলুফা বানুর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে নবজাতকের আয়নার মতন চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হয়-"সে কি জানে,এই মানবজনম মা ছাড়া কি প্রবলভাবেই না বৃথা!"
আরশির মায়ের আশঙ্কা করা এই নিগূড় সত্য কি প্রবলভাবেই না জীবনের প্রতি পদে পদে আরশি উপলব্ধি করে তা জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে সাদাত হোসাইন এর লেখা আরশিনগর উপন্যাসটি।একটা মানবজীবনের সবটা জুড়ে মানুষ কেবল অন্য মানুষকেই চিনতে চায়,জানতে চায়।কিন্তু সে কখনো টের পায় না,এই একজীবনে সে তার নিজেকেই কতটা কম চিনে!
উপন্যাস জুড়েই সাদাত হোসাইন শোনাতে চেয়েছেন বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের ছোট ছোট গল্প,জীবনের গল্প,সুখের গল্প ও শোকের গল্প। দিনশেষে কোন না কোন ভাবে তাদের সবার গল্পটাই বাঁধা পড়েছে একটি সুতোয়।
উপন্যাসের এক পর্যায়ে আম্বরি বেগমের সংলাপের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক পাঠকদের উপলব্ধি করিয়েছেন জীবনের নিগূড় এক সত্যকে-মানবজীবন আসলে আয়নার এর মত উলটো এক জগত।এই জগতে আমরা জীবনটাকে যেমন ভাবে কাটাতে চাই তার ঠিক বিপরীত ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকে জীবনে।
এই উপন্যাসটি আপনাকে একবার হলেও ভাবাবে জীবনের মানে!একবার হলেও উপলব্ধি করাবে প্রত্যেক মানুষের বুকের ভেতর পুষে রাখা দুঃখকে।যে উপলব্ধি আপনাকে বিনয়ী করবে,করবে সহনশীল।


পাঠক রিভিউঃ  জগতের সবকিছুর ঋণ চোখের কাছে আর চোখের ঋণ আয়নার কাছে। জীবন আর জগতের সবকিছু দেখতে পাওয়া এই চোখ শুধু আয়নাতেই নিজেকে দেখতে পায়। কি অদ্ভুত এক হিসাব! 
এই ঋণ তাই এই জগতেরও। আর এই জগতের নাম আরশিনগর।
বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে পঠিত উপন্যাসিক এই সাদাত হোসাইন। '' আরশিনগর " উপন্যাসও তার এই জনপ্রিয়তার এক প্রতিচ্ছবি। 
একটা সাদামাটা গল্পকে, গল্পকথক যেভাবে অতি অনিন্দ্য সুন্দররুপে বর্ণনা করেছেন তা সত্যিই অসাধারণ। অনেকগুলো চরিত্র তৈরি করেও তা সমান্তরাল ভাবে ধরে রাখার যেই দক্ষতা লেখক দেখিয়েছেন সেটাই এই উপন্যাস টিকে সুন্দর করে তুলেছে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ  পৃথিবীর সব মানুষ যেমন আলাদা তেমনি ভাবে প্রতিটি পাঠকের রুচিবোধও ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।
যদি আমার ক্ষেত্রে বলি তাহলে বলবো, এরকম ধাচের গল্পের  উপন্যাস খুবই কম পড়া হয়েছে। প্রথমদিকে খুব ভালো না লাগলেও  খারাপ লাগছিলো সেটা বলা যাবে  নাহ। তবে উপন্যাসটি যতোটুকু এগিয়েছে ততোই যেনো আমি গল্পের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। শেষের দিকে মনে হয়েছে হুট করেই যেন বইটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে বইয়ের সবটুকুই যে ভালো লেগেছে তাও নয়!
কিছু জায়গায় বেশ কিছু চরিত্রকে হুটহাট মেরে ফেলার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তবে পুরো উপন্যাসটার কথা যদি বলি তাহলে বলবো আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে :3
ব্যক্তিগত রেটিং- ৪.৫/৫ 
© শাহারিয়ার নিবিড়



পোস্টটির দ্বারা উপকৃত হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার কর‍তে ভুলবেন না। প্রতিদিন নতুন নতুন পিডিএফ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post by Label

Automatic Ads ( 728 x Auto )

Share Button

Automatic Ads ( 728 x Auto )

Footer Social Link

Automatic Ads ( 728 x Auto )